Skip to main content

ওয়ারেন হেস্টিংস এবং কর্ণওয়ালিসের সংস্কার

☼ হেস্টিংসের সংস্কার [Warren Hastings’ Reforms]:- [১৭৭২-৮৪ খ্রিস্টাব্দ] হেস্টিংস যখন ভারতে আসেন তখন আদর্শ শাসনব্যবস্থার কোনো দৃষ্টান্ত তাঁর কাছে ছিল না । তাই শাসন ও রাজস্ব সংক্রান্ত নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে হেস্টিংসের শাসনকাল অতিবাহিত হয়েছিল । নিজ প্রতিভা ও সাংগঠানিক ক্ষমতার জোরে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন ও রাজস্ব ব্যবস্থার যে রূপরেখা রচনা করে যান, প্রধানত তার উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিশ এক বলিষ্ঠ ও সুষ্ঠু কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন । পার্সিভ্যাল ও স্পীয়ারের মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলা যায়, “যদি ক্লাইভ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন, তবে ওয়ারেন হেস্টিংস তাকে সংগঠিত করে একটি কার্যকরী সংস্থায় পরিণত করেছিলেন, আর কর্নওয়ালিশ আপন চিন্তা ভাবনা অনুযায়ী তাকে একটি সুসংহত ও সুনির্দিষ্ট রূপ দান করেছিলেন ।”   
ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁর আমলে
(১) প্রথমেই দ্বৈত-শাসনব্যবস্থা লোপ করা হয় ও শাসনব্যবস্থা কোম্পানির তত্বাবধানে নিয়ে আসেন । 
(২) রাজস্ব আদায়কারী অত্যাচারী রেজা খাঁ ও সিতাব রায়কে পদচ্যুত করে কালেক্টর নামক এক কেন্দ্রীয় কর্মচারীর হাতে রাজস্ব আদায়ের ভার দেন ।
(৩) রাজকোষের উপর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার জন্য তিনি রাজকোষাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন ।
(৪) হেস্টিংস রাজস্ব বিভাগের কাজকর্ম সম্পর্কে অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘আমিনি কমিশন’ নামে এক সংস্থা স্থাপন করেন । এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তিনি কালেক্টর পদের পুনঃপ্রবর্তন করেন ।
(৫) কোম্পানির কর্মচারীরা যাতে বাদশাহ প্রদত্ত দস্তকের অপব্যবহার ও বিনা শুল্কে ব্যবসা না করতে পারেন সে দিকে হেস্টিংস কড়া নজর রাখতেন ।
(৬) কোম্পানির ব্যয় সংকোচনের জন্য তিনি দিল্লির মোগল বাদশাহ এবং বাংলার নবাবের বার্ষিক ভাতার পরিমাণ হ্রাস করেন । 
  এই ভাবে ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতা কলকাতার গভর্নর জেনারেল ও তাঁর সুপ্রীম কাউন্সিলের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, যা ভারতের কেন্দ্রীভূত প্রশাসন ব্যবস্থার সূচনা করে ।

Comments

Popular posts from this blog

পুঁই মাচা__ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বাংলা গল্প

সহায়হরি চাটুয্যে উঠানে পা দিয়েই স্ত্রীকে বলিলেন-একটা বড় বাটি কি ঘটি যা হয় কিছু দাও তো, তারক খুড়ো গাছ কেটেছে, একটু ভালো রস আনি। স্ত্রী অন্নপূর্ণ খড়ের রান্নাঘরের দাওয়ায় বসিয়া শীতকালের সকালবেলা নারিকেল তেলের বোতলে ঝাটার কাটি পুরিয়া দুই আঙুলের সাহায্যে কাটার কাটিলগ্ন জমানো তৈলটুকু সংগ্ৰহ করিয়া চুলে মাখাইতেছিলেন। স্বামীকে দেখিয়া তাড়িতাড়ি গায়ের কাপড় একটু টানিয়া দিলেন মাত্র, কিন্তু বাটি কি ঘটি বাহির দিবার জন্য বিন্দুমাত্র আগ্রহ তো দেখাইলেনই না, এমনকি বিশেষ কোনো কথাও বলিলেন না। সহায়হরি অগ্রবর্তী হইয়া বলিলেন-কী হয়েছে, বসে রইলে যে? দাও না একটা ঘটি? আহ ক্ষেন্তি-টেন্তি সব কোথায় গেল এরা? তুমি তেল মেখে বুঝি ছোবে না? অন্নপূর্ণা তেলের বোতলটি সরাইয়া স্বামীর দিকে খানিকক্ষণ চাহিয়া রহিলেন, পরে অত্যন্ত শান্ত সুরে জিজ্ঞাসা করিলেন-তুমি মনে-মনে কী ঠাউরেছ বলতে পারো? স্ত্রীর অতিরিক্ত রকমের শান্ত সুরে সহায়হরির মনে ভীতির সঞ্চার হইল। ইহা -যে ঝড়ের অব্যবহতি পূর্বের আকাশের স্থিরভাব মাত্র, তাহা বুঝিয়া তিনি মরিয়া হইয়া ঝড়ের প্রতীক্ষায় রহিলেন। একটু আমতা আমতা করিয়া কহিলেন-কেন...কী আবার ....